মনে করুন, আপনি বসে রয়েছেন বিছানায়। অন্য পাশে
থাকা টেবিলে রাখা ডেস্কটপ পিসিতে চলছে আপনার পছন্দের গান। গান শুনতে শুনতে
হঠাত্ আপনার ফোনটি বেজে উঠল। ফোনটি ধরে কথা তো বলতে হবে। আবার গানটিও ‘পজ’
করে রাখা দরকার। এমন সময়ে হাত দিয়ে ইশারা করতেই ‘পজ’ হয়ে গেল চলতে থাকা
গানটি। আপনিও কথা বলতে থাকলেন। কথা শেষ হয়ে গেলে আবার মনিটরকে লক্ষ্য রেখে ইশারা করতেই শুরু হয়ে গেল গান।
উপরের দৃশ্যটিকে এখন আর তেমনি নিছক কল্পনা বলে উড়িয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ
নেই। বরং নতুন অ্যাপ্লিকেশনের কল্যাণে এখন এই দৃশ্য পরিণত হয়েছে বাস্তবে।পিসি বা পার্সোনাল কম্পিউটার জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পর থেকেই পিসি চালানোকে সহজ করতে নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন গবেষকরা। আর এই প্রক্রিয়ায় সকলের অত্যন্ত আগ্রহের জায়গাটি হচ্ছে ইশারায় পিসি চালানো। অনেকদিন থেকে এই নিয়ে গবেষকরা গবেষণা চালিয়ে গেলেও ইশারার মাধ্যমে কম্পিউটার চালানোর প্রক্রিয়াটি সাধারণ মানুষের কাছে সহজে পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি গবেষকদের কাছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কাইনেক্ট প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে এখন গেমিংয়ে বলতে গেলে যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। কম্পিউটার চালানোর কাজেও একই রকম ফিচার নিয়েই তৈরি হয়েছে ‘ফ্লাটার’ নামের একটি অ্যাপ্লিকেশন। তবে গেমিংয়ে কাইনেক্ট যুক্ত করতে যে পরিমাণ খরচ করতে হয়, তার চেয়ে ফ্লাটারে খরচ তুলনামূলকভাবে অনেকটাই কম। আর তাতে করে কিবোর্ড বা মাউস ব্যবহার না করেও সহজেই পরিচালনা করা যায় কম্পিউটারের বিভিন্ন কাজ। এর জন্য প্রয়োজন কেবল একটি ওয়েবক্যাম।
ফ্লাটার অ্যাপ্লিকেশনটি সম্পর্কে নির্মাতা নাভনিত ডালাল জানিয়েছেন, ‘উইন্ডোজ এবং ম্যাক পিসিতে স্পটিফাই বা আইটিউনস ব্যবহার করে গান শোনার সময় হাতের সহজ কিছু ইশারার মাধ্যমেই গান বন্ধ করে দেওয়া যাবে আমাদের এই অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে। গান শোনার ক্ষেত্রে দেখা যায়, সাধারণতই অন্য কোনো কাজ কম্পিউটারে করার সময় ব্যাকগ্রাউন্ডে গান ছেড়ে রাখা হয়। অনেক সময় গান চালিয়ে দিয়ে ইন্টারনেট ব্রাউজ করা, প্রোগ্রামিং করা, কোনো কিছু লেখা বা ডিজাইন করার মতো কাজগুলো করা হয়। আবার গান চালিয়ে দিয়ে কম্পিউটার উঠেও যাওয়া হয়। এসব সময় গান বন্ধ করতে হলে বা গান বদলাতে হলে প্রথমে সংশ্লিষ্ট প্লেয়ারটির উইন্ডোকে নিয়ে আসতে হয় উপরে। তারপর বন্ধ করতে বা বদলে দিতে হয় গান। এত কিছু না করে ফ্লাটারের মাধ্যমে ১ থেকে ৬ ফুট দূরে অবস্থান করেও হাতের ইশারাতেই করা যাবে কাঙ্ক্ষিত কাজটি।’
নাভনিত ২০১০ সালে মেহুল নারিয়াওয়ালাকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করেন ফ্লাটার নিয়ে গবেষণা। প্রথমে তারা সাধারণ ওয়েবক্যাম ব্যবহার করে হাতের ইশারাগুলো কম্পিউটারকে চিনিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেন। প্রায় দেড় বছর ধরে তারা কেবল ইশারাগুলোকে চিনিয়ে দেওয়ার কাজটিই করেন। আর তারপর তারা শুরু করেন অ্যাপ্লিকেশনটি চূড়ান্ত করার কাজ।
এই কাজ শুরু করার পর অনেকের কাছ থেকেই নেতিবাচক মন্তব্য পেয়েছেন নাভনিত এবং মেহুল। তাদের ভাষায়, ‘শুরুতে অনেকেই আমাদের বলেছিল যে সাধারণ ওয়েবক্যাম ব্যবহার করে এই অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা সম্ভব নয়। সাধারণ ওয়েবক্যামে হাতের ইশারাকে পূর্ণাঙ্গভাবে সনাক্ত করা সম্ভব নয়। তারা আমাদের মাইক্রোসফট আর তাদের কাইনেক্ট সম্পর্কেও বলেছে। কাইনেক্টে যেখানে হাই-এন্ড সব ক্যামেরা এবং লেজার সেন্সর ব্যবহার করা হয়, সেখানে আমাদের সাধারণ ওয়েবক্যামের উপর কেউই ভরসা করতে পারেনি। এমনকি অনেক গবেষই একে অসম্ভব বলে জানিয়েছিল। তবে আমরা সাহস হারাইনি। আর তাতে করেই আমাদের সাফল্য ধরা দেয়।’
ফ্লাটার তৈরি করে অবমুক্ত করার পর থেকেই প্রচুর সাড়া পেয়ে আসছেন নির্মাতারা। শুরুতে তারা কেবল অ্যাপল’র ম্যাক ওএসএক্স-এর জন্য তৈরি করে এই অ্যাপ্লিকেশন।
অব্যাহত গবেষণার ফলাফল হিসেবে সম্প্রতি তারা উইন্ডোজের জন্যও তৈরি করেছে এর একটি সংস্করণ। বর্তমানে কেবল গান আর সিনেমার জন্য এই অ্যাপ্লিকেশনটি কাজ করলেও অল্প সময়ের মধ্যেই এতে আরও নানান ধরনের ফিচার যোগ করা হবে বলেই জানিয়েছেন নির্মাতারা। আর তারা যেভাবে সাড়া পাচ্ছেন, তা তাদের অনেকদূর এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা যুগিয়ে যাচ্ছে বলেই মন্তব্য করেন তারা।
আসাদ ভাই আপনার পোস্টটি পেয়ে খুবই খুশি হলাম। আশা করি ভবিষ্যতে আরও অনেক ভাল ভাল পোষ্ট পাব।
উত্তরমুছুনThanks. Md. Tazul Islam.
উত্তরমুছুন